ঢাকা,রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

মাতামুহুরী নদীগর্ভে উপকূলীয় বাঘগুজারা-বদরখালী সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দুই বছর, জনদুর্ভোগ

ছোটন কান্তি নাথ, চকরিয়া ::

মাতামুহুরী নদীর ভয়াবহ ভাঙনে একেবারেই বিলীন হতে চলেছে কক্সবাজারের চকরিয়ার উপকূলীয় কোনাখালীর বাঘগুজারা টু বদরখালী সড়ক কাম বেড়িবাঁধটি। ব্যস্ততম এই সড়কটির বিভিন্নস্থান একেবারেই নদীগর্ভে তলিয়ে যাওয়ায় গত দুইবছর ধরে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এতে উপকূলীয় পেকুয়া, কোনাখালী, ঢেমুশিয়া, বদরখালীর কয়েক লাখ মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সড়কটি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় দুইবছর আগের ভয়াবহ বন্যার সময়। তৎসময় মাতামুহুরী নদীতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি এবং সামুদ্রিক অস্বাভাবিক জোয়ারের তোড়ে সড়কটির বিশাল অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ওইসময় যদি সংশ্লিষ্ট দপ্তর ভাঙন রক্ষায় উদ্যোগ নিত তাহলে সড়কটির এই অবস্থা হত না।

তারা আরো অভিযোগ করেন, সড়কটির এই দুরবস্থা স্থানীয় এমপি, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তা এবং এলজিইডির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অবগত থাকলেও তাঁরা কোনো উদ্যোগই নেননি। উপরন্তু ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করে শুধু আশ্বাসই দিয়ে এসেছেন ভুক্তভোগী মানুষগুলোকে।

কোনাখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান দিদারুল হক সিকদার চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘আমাদের একজন এমপি রয়েছেন। তিনি চাইলে সড়কটি টেকসইভাবে মেরামত করাসহ যান চলাচলের উপযোগী করতে উদ্যোগ নিতে পারতেন। কিন্তু তিনি এ নিয়ে কোনো মাথাই ঘামাননি। আবার এমপি মহোদয় দাবি করেন, তিনি গত পাঁচবছরে এলাকার অনেক উন্নয়ন করেছেন। আসলে কোন ধরনের উন্নয়ন তিনি করেছেন এই সড়কটি দেখলেই বোঝা যায়।’

তিনি আরো জানান, সড়কটি গত দুইবছর ধরে মাতামুহুরী নদীগর্ভে বিলীন হতে হতে সামান্যটুকু বাকি রয়েছে। এই অবস্থায় চলতি শুষ্ক মৌসুমে যদি মাতামুহুরী নদীতীরের এই বাঁধ কাম সড়কটি নতুন করে নির্মিত না হয় তাহলে বরাবরের মতোই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকবে।

উপকূলীয় বদরখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. খাইরুল বশর চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘কোনাখালী ইউনিয়নের বাঘগুজারা থেকে বদরখালী পর্যন্ত সড়কটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১২ কিলোমিটার। তন্মধ্যে কোনাখালী বাঘগুজারা পয়েন্টে মাতামুহুরী নদীতীরের প্রায় দেড় কিলোমিটার অংশ একেবারেই নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে। এতে করে গত দুইবছর ধরে এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে না পারায় বিকল্প পথে উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হচ্ছে।’

চেয়ারম্যান বলেন, ‘আসলে আমাদের এমনই একজন জনপ্রতিনিধি দরকার, যার হাত দিয়ে চকরিয়া ও পেকুয়ার উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। তা না হলে এভাবেই শত সমস্যা নিয়ে দিন পার করতে হবে উপকূলের বাসিন্দাদের।’

এলাকার ভুক্তভোগী বাসিন্দারা চকরিয়া নিউজকে জানান, মাতামুহুরী নদীতীরের এই সড়ক কাম বেড়িবাঁধটির বিশাল অংশ নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পাশাপাশি পুরো সড়কজুড়ে অসংখ্য ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সড়কটি বর্তমানে বেহালদশায় পরিণত হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং এলজিইডির কোনো তৎপরতাই লক্ষ করা যাচ্ছে না। ভয়াবহ বন্যা এবং সামুদ্রিক অস্বাভাবিক জোয়ারের পানির তোড়ে অভ্যন্তরীণ জনগুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি ঢেমুশিয়া ও কোনাখালীর একাধিক পয়েন্টে মাতামুহুরী নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।  সরেজমিন দেখা গেছে, চকরিয়া পৌরশহরের চিরিঙ্গা-জনতা মার্কেট হয়ে কোনাখালী ইউনিয়ন পর্যন্ত যান চলাচল উপযোগী থাকলেও কোনাখালীর বাঘগুজারায় মাতামুহুরী নদীর উপর নির্মিত সেতু থেকে বাংলাবাজার হয়ে বদরখালী বাজার পর্যন্ত মাতামুহুরী নদীর তীর ঘেঁষেই সড়কটি বিদ্যমান।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, উপকূলীয় কোনাখালী-বাঘগুজারা-বদরখালী সড়কটি মূলত পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মিত মাতামুহুরী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। মানুষের যাতায়াত ও যানবাহন চলাচলের সুবিধার্থে এই বাঁধটি সড়ক হিসেবে ব্যবহার করতে বিগত ২০০৪ এবং ২০০৯ সালে দুইদফায় সড়কটি কার্পেটিং ও ঢালাই দিয়ে সড়কটি যানবাহন চলাচল উপযোগী করে দেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সড়কটি মেরামত ও সংস্কার কাজে কোনো দপ্তর এগিয়ে না আসায় মাতামুহুরী নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় বর্ষাকালে বন্যা এবং সামুদ্রিক অস্বাভাবিক জোয়ারে প্রতিবছর বিশাল অংশ নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ায় আদৌ সড়কটি রক্ষা করা যাবে কি-না সেই সংশয় কাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে।

কোনাখালী ইউনিয়নের বাসিন্দা রবিউল আলম চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘ব্যস্ততম এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন উপকূলীয় এলাকার কয়েক হাজার শিক্ষার্থী জেলা ও উপজেলা সদরের অন্তত ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করেন। তাছাড়া উপকূলীয় এলাকার উৎপাদিত ফসল এবং মানুষের যাতায়াতের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে সড়কটি। কিন্তু দীর্ঘ কয়েকবছর ধরে সড়কটিতে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় মানুষের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। এই অবস্থায় স্থানীয় জনগণের ক্ষোভ প্রশমিত করতে অতি দ্রুত সড়কটি টেকসইভাবে নির্মাণের উদ্যোগ নিতে হবে।’

এলজিইডি চকরিয়া কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০০৪ সালে প্রথম দফায় সড়কটিতে পিচ ঢালাই দেওয়ার পর যানবাহন চলাচল শুরু হয়। এর পর ২০০৯ সালে দ্বিতীয় দফায় দেওয়া হয় পিচ ঢালাই। এর পর থেকে মূলত সড়কটিতে আর কোনো সংস্কারকাজ হয়নি। এ কারণে গত ৯ বছর ধরে বন্যা এবং সামুদ্রিক অস্বাভাবিক জোয়ারের পানির তোড়ে সড়কটির বিভিন্নস্থানে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দেয়। চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাফর আলম চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘কোনাখালী-বাঘগুজারা-বদরখালী সড়কটি মূলত কয়েকটি ইউনিয়নের রক্ষাকবচ তথা বেড়িবাঁধ। তাই জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কটি নদীর ভাঙন থেকে রক্ষায় প্রয়োজনীয় সকল ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘সড়কটির দুরবস্থা ইতোমধ্যে সরেজমিন প্রত্যক্ষ করেছি। ওই সময় পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং এলজিইডির কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল দ্রুত সড়কটি যানবাহন চলাচল উপযোগী করে তুলতে। তবে কি কারণে সড়কটির এখনো দুরবস্থা রয়ে গেছে তার কৈফিয়ত নেব আমি।’

এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) চকরিয়া উপজেলা প্রকৌশলী কমল কান্তি পাল চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘মাতামুহুরী নদীগর্ভে তলিয়ে যাওয়া কোনাখালী-বাঘগুজারা-বদরখালী সড়কটি টেকসইভাবে নির্মাণ করার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। চলতি শুষ্ক মৌসুমেই সড়কটির কাজ সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থবরাদ্দ চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। আশা করছি, দ্রুতই সড়কটির মেরামত কাজ শুরু করা যাবে।’

পাঠকের মতামত: